নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। এ জন্য সে নিজেকে মনের মতো সাজায় ৷ কোনো ব্যক্তির সাজসজ্জার পারিপাট্য বলতে ব্যক্তির দেহের সাথে মানানসই পোশাক পরিচ্ছদ ও আনুষঙ্গিক প্রসাধন কার্যের মিলিত অবস্থাকে বোঝায়। শারীরিক সৌন্দর্য তখনই উদ্ভাসিত হয় যখন শরীর সুস্থ থাকে। সুস্থ দেহে সুস্থ মন থাকে। সুস্থ্য মনই শৈল্পিকভাবে পরিপাটি থাকতে তাগিদ সৃষ্টি করে।
পারিপাট্য বজায় রাখার জন্য করণীয় বিষয়গুলো নিম্নরূপ—
- পারিপাট্যের জন্য পোশাক পরিচ্ছদের নিয়মিত যত্ন তথা ধোয়া, ইস্ত্রি ও মেরামত প্রয়োজন।
- সময়োপযোগী পোশাক নির্বাচন ও পরিধান করা পারিপাট্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ।
- ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা যেমন, চুল, চোখ, দাঁত, নখ ইত্যাদির পরিচ্ছন্নতা ও স্বাভাবিক সৌন্দর্য বজায় রাখতে হবে। দেহে সৌষ্ঠবের ভঙ্গিতে ঋজুতা ও সাবলীলতা এবং কথা বলার স্বাভাবিক ভঙ্গি বজায় রাখতে হবে।
- অনুষ্ঠান, উপলক্ষ, স্থান, আবহাওয়া, বয়স, পেশা, দেহের আকার আয়তন ইত্যাদি বিবেচনা করে
- মানানসই পোশাক পরা উচিত। সব ধরনের ডিজাইন, সব টাইপের পোশাক সবার জন্য প্রযোজ্য নয় ৷
- পরিপাটি হওয়ার জন্য দামি পোশাকের প্রয়োজন নেই। অত্যাধুনিক পোশাক না পরেও প্রচলিত ও সামঞ্জস্যপূর্ণ পোশাক পরিধান করে পরিপাটি হওয়া যায় ৷
- সাধারণ পোশাকের সাথে আনুষঙ্গিক প্রসাধনীর সুসমন্বয় ঘটিয়ে আকর্ষণীয় হয়ে উঠা যায় ।
- সাংস্কৃতিক রীতি অনুযায়ী পোশাক নির্বাচন করা উচিত। যেমন- একজন বাঙালি মেয়েকে শাড়িতেই সুন্দর লাগে।
- পোশাকে শিল্পের সৃষ্টির উপকরণ ও নীতিগুলোর সমন্বয় ঘটাতে পারলে পরিধানকারী আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে পারে। পোশাকের বিভিন্ন অংশের সাথে রং, রেখা ও জমিনের মিল পরিপাট্য আনয়নে গুরুত্বপূর্ণ যেমন : শাড়ির সাথে উপযুক্ত ব্লাউজ; সালোয়ার-কামিজের সাথে উপযুক্ত ওড়নার ব্যবহার মার্জিত রুচির পরিচয় বহন করে ।
- পোশাকের সাথে জুতা, হাতব্যাগ, গহনা এবং মেকআপ ইত্যাদির সমন্বয় সাধন করা সুপরিপাট্যের অন্যতম শর্ত। যেমন: শাড়ির সাথে কেডস মানানসই নয়। একইভাবে স্কুলের পোশাকের সাথে উঁচু হিল পরা অসামঞ্জস্যপূর্ণ। স্কুলের মেয়েদের লিপস্টিক, কাজল, গহনা ইত্যাদির ব্যবহার পারিপাট্যের পরিপন্থী। অর্থাৎ পরিপাট্যের জন্য পরিধেয় পোশাক-পরিচ্ছদ ও আনুষঙ্গিক দ্রব্যাদির মধ্যে ঐক্য স্থাপন করতে হবে।
দৈহিক পরিচ্ছন্নতা
ব্যক্তির আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের অন্যতম শর্ত হলো সুস্বাস্থ্য। সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ব্যক্তির মানসিক স্বাস্থ্যও ভালো থাকে। সুস্বাস্থ্য গঠনের জন্য প্রয়োজন দেহের পরিচ্ছন্নতা ও যত্ন। বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিয়ে মানবদেহ গঠিত যথা: হাত, পা, দাঁত, চোখ, কান, নাক, গলা, চুল, ত্বক ইত্যাদি। এই অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোর পরিচ্ছন্নতার সার্বিক রূপই হলো দৈহিক পরিচ্ছন্নতা। ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য অটুট রাখাই দৈহিক পরিচ্ছন্নতার উদ্দেশ্য। অঙ্গ— প্রত্যঙ্গের যত্নের মাধ্যমে দাঁত, ত্বক, চুল তথা সমগ্র দেহাবয়ব মোহনীয় হয়ে উঠলে মানসিক জড়তা দূর হয়ে ব্যক্তিত্বের দৃঢ়তা ফুটে উঠে। নিজেকে আকর্ষণীয়ভাবে সবার সামনে প্রকাশ করতে কোনো সংকোচ থাকে না।
দৈহিক পরিচ্ছন্নতা অর্জনের জন্য করণীয় বিষয়গুলো হলো—
ক) অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের—পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করা—
হাতের যত্ন : ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার ক্ষেত্রে প্রথমেই আসে হাত। মসৃণ ও সুডোল হাত সৌন্দর্য ও সুস্থতা প্ৰকাশ করে। হাতের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার জন্য যেসব বিষয় লক্ষ রাখা প্রয়োজন সেগুলো হলো—
- কোনো কাজ করার পর হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
- হাতের মসৃণতা বজায় রাখার জন্য ক্রিম বা লোশন ব্যবহার করতে হবে ।
- হাতে বিভিন্ন তরকারির কষের দাগ কিংবা রান্নার মসলার দাগ লাগলে লেবু দিয়ে ঘষলে হাত দাগমুক্ত হয়ে যায় ৷ হাতের নখ কেটে ছোট করতে হবে। নখের মধ্যে ময়লা ঢুকলে তা পেটে গিয়ে রোগ সৃষ্টি করে সুস্থতায় বিঘ্ন ঘটায় ।
পায়ের যত্ন : পায়ের যত্নে লক্ষণীয় বিষয়গুলো হলো-
- প্রতিদিন পা সাবান দিয়ে ঘষে ঘষে ময়লা তুলে পরিষ্কার করতে হবে এবং মসৃণতা রক্ষার জন্য তেল,
- লোশন, গ্লিসারিন, পেট্রোলিয়াম জেলি ইত্যাদি ব্যবহার করতে হবে।
- মাঝে মাঝে ঈষদুষ্ণ গরম পানিতে লবণ গুলে পা ৩০-৩৫ মিনিট ডুবিয়ে রাখলে পায়ের ময়লা এবং ক্লান্তি দূর হয় ৷
দাঁতের যত্ন : দাঁতের যত্নে লক্ষণীয় বিষয়গুলো—
- প্রতিদিন মানসম্মত পেষ্ট বা দাঁতের মাজন ব্যবহার করতে হবে।
- খাওয়ার পর দাঁত পরিষ্কার করে নিতে হবে।
- দাঁত মাজার জন্য ছাই, কয়লা, পোড়ামাটি স্বাস্থ্যসম্মত নয়। এগুলো ব্যবহারে দাঁতের ক্ষতি হয়।
- দুর্গন্ধমুক্ত উজ্জ্বল দাঁত সৌন্দর্য ও সুস্বাস্থ্যের পরিচায়ক।
চোখের যত্ন : মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মধ্যে চোখই সবচেয়ে কোমল ও সূক্ষ্ম। উত্তেজনাপ্রবণ কালিমাবিহীন, স্বচ্ছ, চকচকে চোখ সুস্থতার পরিচয় বহন করে। চোখের নিরাপত্তা বিধানে নিম্নের বিষয়গুলো লক্ষ রাখতে হবে-
- প্রতিদিন ভোরে চোখ পরিষ্কার করে ঠান্ডা পানির ঝাপটা দিতে হবে।
- তীব্র বা উজ্জ্বল এবং কম বা নিষ্প্রভ এই দুই ধরনের আলোই চোখের জন্য ক্ষতিকর। কাজের প্রকৃতি অনুযায়ী পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা প্রয়োজন ।
- নীল বা সবুজ আলো চোখে স্নিগ্ধ অনুভূতি আনে। ক্লান্তি দূর করে।
- চোখের সুস্থতার জন্য ভিটামিন 'এ' সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করতে হয়।
- চোখ চুলকালে বা লাল হলে কিংবা পানি ঝরলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
চুলের যত্ন : পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, উজ্জ্বল ও মসৃণ এবং সুবিন্যস্ত চুল ব্যক্তিত্বের পরিচয় বহন করে। যেসব নিয়মগুলো চুলের সৌন্দর্য ও সুস্থতা রক্ষা করে সেগুলো হলো—
- নিয়মিতভাবে চুল আঁচড়াতে হবে এবং পরিষ্কার রাখতে হবে। এ জন্য অল্প ক্ষারযুক্ত সাবান, প্রাকৃতিকউপকরণ যেমন মসুরের ডালের পানি, মেথি বাটা ও ডিমের মিশ্রণ, লেবুর রস ইত্যাদি ব্যবহার করা যায় ৷
- খুশকি দূর করার জন্য লেবুর রস, মেথি বাটা, নিমপাতার পানি, ডিমের কুসুম ইত্যাদি ব্যবহার করলেmউপকার পাওয়া যায় ৷
- চুলের মসৃণতা বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত তেলের সাথে লেবুর রস, চায়ের লিকার, টকদই ইত্যাদি ব্যবহার করতে হবে।
- ‘ভিটামিন এ' জাতীয় খাবার গ্রহণ করলে চুল ভালো থাকে ।
নাক, কান ও গলা : নাক, কান ও গলা এই নিকটবর্তী অঙ্গগুলোর সুস্থতা খুবই জরুরি। শ্রবণেন্দ্রীয় কান দিয়ে কথা ঠিকভাবে শুনেই আমরা নিজেরা কথার উত্তর দিই, চিন্তা করি। ঠান্ডা লাগলে নাক গলা বসে গেলে কিংবা নাক দিয়ে অনবরত পানি ঝরলে দেখতে যেমন খারাপ লাগে, তেমনি স্বাভাবিক জীবনেও বাধার সৃষ্টি হয় । স্পষ্ট ভাষায় মিষ্ট স্বরে কথা বললে সুন্দর ব্যক্তিত্বেরই পরিচয় ফুটে উঠে। গলার সুস্থতার জন্য লবণযুক্ত গরম পানি ভালো ৷
ত্বকের যত্ন : পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ত্বক উজ্জ্বল ও নীরোগ হয়। ত্বকের বর্ণ যেমনই হোক না কেন তা যদি কোমল, মসৃণ ও পরিচ্ছন্ন হয় তাহলে তা আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বেরই পরিচয় দেয়। ত্বকের সুস্থতার জন্য প্রয়োজন—
- নিয়মিত গোসলের অভ্যাস ত্বকের পরিচ্ছন্নতা বাড়ায় ৷
- কখনোই বেশি গরম বা বেশি ঠান্ডা পানি ব্যবহার করা ঠিক নয়।
- ক্ষারহীন ভালো সাবান দিয়ে প্রতিদিন গা রগড়িয়ে গোসল করা উচিত।
- গোসল কিংবা হাত মুখ ধোয়ার পর ত্বকের মসৃণতা বাড়ানোর জন্য ক্রিম/অলিভয়েল/গ্লিসারিন ব্যবহার করতে হয়।
খ) পোশাক-পরিচ্ছদের পরিচ্ছন্নতা—
শুধুমাত্র অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের পরিচ্ছন্নতা দেহের সার্বিক পরিচ্ছন্নতা আনয়ন করতে পারে না। এ জন্য প্রয়োজন পোশাক— পরিচ্ছদের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা। পোশাকের-পরিচ্ছন্নতার সাথে দেহের সুস্থতা ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। কারণ পোশাক মানুষের দেহের সাথে সংলগ্ন থাকে এবং দেহের পরিচ্ছন্নতাকে সংরক্ষণ করে। অপরিচ্ছন্ন পোশাক দৈহিক পরিচ্ছন্নতাকে বাধাপ্রাপ্ত করে। এই অপরিচ্ছন্ন পোশাক পরিপাট্যের অন্তরায়। এ জন্য দৈহিক পরিচ্ছন্নতাকে নিশ্চিত করার জন্য পোশাক পরিচ্ছদের পরিচ্ছন্নতা অপরিহার্য।
কাজ – পারিপাট্যতার উপায়গুলো কী বর্ণনা কর ।